সূরা আয-যারিয়াত (বিক্ষিপ্তকারী বায়ু - বাংলা অনুবাদ) سُورَة الذاريات

এই সূরাটি কুরআনের 51 নম্বর সূরা এবং এতে 60 টি আয়াত রয়েছে। সূরা আয-যারিয়াত কুরআনের ৫১তম সূরা এবং এতে ৬০টি আয়াত রয়েছে। এতে সৃষ্টি, ফেরেশতা ও পুরনো জাতির ধ্বংস বর্ণিত হয়েছে।

অনুবাদ: সূরা আয-যারিয়াত (বিক্ষিপ্তকারী বায়ু) سُورَة الذاريات

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

وَالذَّارِيَاتِ ذَرْوًا ١

কসম ঝঞ্ঝাবায়ুর। (১)

فَالْحَامِلَاتِ وِقْرًا ٢

অতঃপর বোঝা বহনকারী মেঘের। (২)

فَالْجَارِيَاتِ يُسْرًا ٣

অতঃপর মৃদু চলমান জলযানের (৩)

فَالْمُقَسِّمَاتِ أَمْرًا ٤

অতঃপর কর্ম বন্টনকারী ফেরেশতাগণের (৪)

إِنَّمَا تُوعَدُونَ لَصَادِقٌ ٥

তোমাদের প্রদত্ত ওয়াদা অবশ্যই সত্য। (৫)

وَإِنَّ الدِّينَ لَوَاقِعٌ ٦

ইনসাফ অবশ্যম্ভাবী। (৬)

وَالسَّمَاءِ ذَاتِ الْحُبُكِ ٧

পথবিশিষ্ট আকাশের কসম (৭)

إِنَّكُمْ لَفِي قَوْلٍ مُخْتَلِفٍ ٨

তোমরা তো বিরোধপূর্ণ কথা বলছ। (৮)

يُؤْفَكُ عَنْهُ مَنْ أُفِكَ ٩

যে ভ্রষ্ট, সেই এ থেকে মুখ ফিরায় (৯)

قُتِلَ الْخَرَّاصُونَ ١٠

অনুমানকারীরা ধ্বংস হোক (১০)

الَّذِينَ هُمْ فِي غَمْرَةٍ سَاهُونَ ١١

যারা উদাসীন, ভ্রান্ত। (১১)

يَسْأَلُونَ أَيَّانَ يَوْمُ الدِّينِ ١٢

তারা জিজ্ঞাসা করে, কেয়ামত কবে হবে? (১২)

يَوْمَ هُمْ عَلَى النَّارِ يُفْتَنُونَ ١٣

যেদিন তারা অগ্নিতে পতিত হবে (১৩)

ذُوقُوا فِتْنَتَكُمْ هَٰذَا الَّذِي كُنْتُمْ بِهِ تَسْتَعْجِلُونَ ١٤

তোমরা তোমাদের শাস্তি আস্বাদন কর। তোমরা একেই ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিল। (১৪)

إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ ١٥

খোদাভীরুরা জান্নাতে ও প্রস্রবণে থাকবে। (১৫)

آخِذِينَ مَا آتَاهُمْ رَبُّهُمْ ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا قَبْلَ ذَٰلِكَ مُحْسِنِينَ ١٦

এমতাবস্থায় যে, তারা গ্রহণ করবে যা তাদের পালনকর্তা তাদেরকে দেবেন। নিশ্চয় ইতিপূর্বে তারা ছিল সৎকর্মপরায়ণ (১৬)

كَانُوا قَلِيلًا مِنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُونَ ١٧

তারা রাত্রির সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত (১৭)

وَبِالْأَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُونَ ١٨

রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করত (১৮)

وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ ١٩

এবং তাদের ধন-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক ছিল। (১৯)

وَفِي الْأَرْضِ آيَاتٌ لِلْمُوقِنِينَ ٢٠

বিশ্বাসকারীদের জন্যে পৃথিবীতে নিদর্শনাবলী রয়েছে (২০)

وَفِي أَنْفُسِكُمْ ۚ أَفَلَا تُبْصِرُونَ ٢١

এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও, তোমরা কি অনুধাবন করবে না? (২১)

وَفِي السَّمَاءِ رِزْقُكُمْ وَمَا تُوعَدُونَ ٢٢

আকাশে রয়েছে তোমাদের রিযিক ও প্রতিশ্রুত সবকিছু। (২২)

فَوَرَبِّ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ إِنَّهُ لَحَقٌّ مِثْلَ مَا أَنَّكُمْ تَنْطِقُونَ ٢٣

নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের পালনকর্তার কসম, তোমাদের কথাবার্তার মতই এটা সত্য। (২৩)

هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ ضَيْفِ إِبْرَاهِيمَ الْمُكْرَمِينَ ٢٤

আপনার কাছে ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি? (২৪)

إِذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلَامًا ۖ قَالَ سَلَامٌ قَوْمٌ مُنْكَرُونَ ٢٥

যখন তারা তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে বললঃ সালাম, তখন সে বললঃ সালাম। এরা তো অপরিচিত লোক। (২৫)

فَرَاغَ إِلَىٰ أَهْلِهِ فَجَاءَ بِعِجْلٍ سَمِينٍ ٢٦

অতঃপর সে গ্রহে গেল এবং একটি ঘৃতেপক্ক মোটা গোবৎস নিয়ে হাযির হল। (২৬)

فَقَرَّبَهُ إِلَيْهِمْ قَالَ أَلَا تَأْكُلُونَ ٢٧

সে গোবৎসটি তাদের সামনে রেখে বললঃ তোমরা আহার করছ না কেন? (২৭)

فَأَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيفَةً ۖ قَالُوا لَا تَخَفْ ۖ وَبَشَّرُوهُ بِغُلَامٍ عَلِيمٍ ٢٨

অতঃপর তাদের সম্পর্কে সে মনে মনে ভীত হলঃ তারা বললঃ ভীত হবেন না। তারা তাঁকে একট জ্ঞানীগুণী পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিল। (২৮)

فَأَقْبَلَتِ امْرَأَتُهُ فِي صَرَّةٍ فَصَكَّتْ وَجْهَهَا وَقَالَتْ عَجُوزٌ عَقِيمٌ ٢٩

অতঃপর তাঁর স্ত্রী চীৎকার করতে করতে সামনে এল এবং মুখ চাপড়িয়ে বললঃ আমি তো বৃদ্ধা, বন্ধ্যা। (২৯)

قَالُوا كَذَٰلِكِ قَالَ رَبُّكِ ۖ إِنَّهُ هُوَ الْحَكِيمُ الْعَلِيمُ ٣٠

তারা বললঃ তোমার পালনকর্তা এরূপই বলেছেন। নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ। (৩০)

قَالَ فَمَا خَطْبُكُمْ أَيُّهَا الْمُرْسَلُونَ ٣١

ইব্রাহীম বললঃ হে প্রেরিত ফেরেশতাগণ, তোমাদের উদ্দেশ্য কি? (৩১)

قَالُوا إِنَّا أُرْسِلْنَا إِلَىٰ قَوْمٍ مُجْرِمِينَ ٣٢

তারা বললঃ আমরা এক অপরাধী সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি (৩২)

لِنُرْسِلَ عَلَيْهِمْ حِجَارَةً مِنْ طِينٍ ٣٣

যাতে তাদের উপর মাটির ঢিলা নিক্ষেপ করি। (৩৩)

مُسَوَّمَةً عِنْدَ رَبِّكَ لِلْمُسْرِفِينَ ٣٤

যা সীমাতিক্রমকারীদের জন্যে আপনার পালনকর্তার কাছে চিহিߦ#2468; আছে। (৩৪)

فَأَخْرَجْنَا مَنْ كَانَ فِيهَا مِنَ الْمُؤْمِنِينَ ٣٥

অতঃপর সেখানে যারা ঈমানদার ছিল, আমি তাদেরকে উদ্ধার করলাম। (৩৫)

فَمَا وَجَدْنَا فِيهَا غَيْرَ بَيْتٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ ٣٦

এবং সেখানে একটি গৃহ ব্যতীত কোন মুসলমান আমি পাইনি। (৩৬)

وَتَرَكْنَا فِيهَا آيَةً لِلَّذِينَ يَخَافُونَ الْعَذَابَ الْأَلِيمَ ٣٧

যারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিকে ভয় করে, আমি তাদের জন্যে সেখানে একটি নিদর্শন রেখেছি। (৩৭)

وَفِي مُوسَىٰ إِذْ أَرْسَلْنَاهُ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ بِسُلْطَانٍ مُبِينٍ ٣٨

এবং নিদর্শন রয়েছে মূসার বৃত্তান্তে; যখন আমি তাকে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ ফেরাউনের কাছে প্রেরণ করেছিলাম। (৩৮)

فَتَوَلَّىٰ بِرُكْنِهِ وَقَالَ سَاحِرٌ أَوْ مَجْنُونٌ ٣٩

অতঃপর সে শক্তিবলে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বললঃ সে হয় যাদুকর, না হয় পাগল। (৩৯)

فَأَخَذْنَاهُ وَجُنُودَهُ فَنَبَذْنَاهُمْ فِي الْيَمِّ وَهُوَ مُلِيمٌ ٤٠

অতঃপর আমি তাকে ও তার সেনাবাহিনীকে পাকড়াও করলাম এবং তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম। সে ছিল অভিযুক্ত। (৪০)

وَفِي عَادٍ إِذْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الرِّيحَ الْعَقِيمَ ٤١

এবং নিদর্শন রয়েছে তাদের কাহিনীতে; যখন আমি তাদের উপর প্রেরণ করেছিলাম অশুভ বায়ু। (৪১)

مَا تَذَرُ مِنْ شَيْءٍ أَتَتْ عَلَيْهِ إِلَّا جَعَلَتْهُ كَالرَّمِيمِ ٤٢

এই বায়ু যার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিলঃ তাকেই চুর্ণ-বিচুর্ণ করে দিয়েছিল। (৪২)

وَفِي ثَمُودَ إِذْ قِيلَ لَهُمْ تَمَتَّعُوا حَتَّىٰ حِينٍ ٤٣

আরও নিদর্শন রয়েছে সামূদের ঘটনায়; যখন তাদেরকে বলা হয়েছিল, কিছুকাল মজা লুটে নাও। (৪৩)

فَعَتَوْا عَنْ أَمْرِ رَبِّهِمْ فَأَخَذَتْهُمُ الصَّاعِقَةُ وَهُمْ يَنْظُرُونَ ٤٤

অতঃপর তারা তাদের পালনকর্তার আদেশ অমান্য করল এবং তাদের প্রতি বজ্রঘাত হল এমতাবস্থায় যে, তারা তা দেখেছিল। (৪৪)

فَمَا اسْتَطَاعُوا مِنْ قِيَامٍ وَمَا كَانُوا مُنْتَصِرِينَ ٤٥

অতঃপর তারা দাঁড়াতে সক্ষম হল না এবং কোন প্রতিকারও করতে পারল না। (৪৫)

وَقَوْمَ نُوحٍ مِنْ قَبْلُ ۖ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمًا فَاسِقِينَ ٤٦

আমি ইতিপূর্বে নূহের সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি। নিশ্চিতই তারা ছিল পাপাচারী সম্প্রদায়। (৪৬)

وَالسَّمَاءَ بَنَيْنَاهَا بِأَيْدٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ ٤٧

আমি স্বীয় ক্ষমতাবলে আকাশ নির্মাণ করেছি এবং আমি অবশ্যই ব্যাপক ক্ষমতাশালী। (৪৭)

وَالْأَرْضَ فَرَشْنَاهَا فَنِعْمَ الْمَاهِدُونَ ٤٨

আমি ভূমিকে বিছিয়েছি। আমি কত সুন্দরভাবেই না বিছাতে সক্ষম। (৪৮)

وَمِنْ كُلِّ شَيْءٍ خَلَقْنَا زَوْجَيْنِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ ٤٩

আমি প্রত্যেক বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা হৃদয়ঙ্গম কর। (৪৯)

فَفِرُّوا إِلَى اللَّهِ ۖ إِنِّي لَكُمْ مِنْهُ نَذِيرٌ مُبِينٌ ٥٠

অতএব, আল্লাহর দিকে ধাবিত হও। আমি তাঁর তরফ থেকে তোমাদের জন্যে সুস্পষ্ট সতর্ককারী। (৫০)

وَلَا تَجْعَلُوا مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ ۖ إِنِّي لَكُمْ مِنْهُ نَذِيرٌ مُبِينٌ ٥١

তোমরা আল্লাহর সাথে কোন উপাস্য সাব্যস্ত করো না। আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট সতর্ককারী। (৫১)

كَذَٰلِكَ مَا أَتَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا قَالُوا سَاحِرٌ أَوْ مَجْنُونٌ ٥٢

এমনিভাবে, তাদের পূর্ববর্তীদের কাছে যখনই কোন রসূল আগমন করেছে, তারা বলছেঃ যাদুকর, না হয় উম্মাদ। (৫২)

أَتَوَاصَوْا بِهِ ۚ بَلْ هُمْ قَوْمٌ طَاغُونَ ٥٣

তারা কি একে অপরকে এই উপদেশই দিয়ে গেছে? বস্তুতঃ ওরা দুষ্ট সম্প্রদায়। (৫৩)

فَتَوَلَّ عَنْهُمْ فَمَا أَنْتَ بِمَلُومٍ ٥٤

অতএব, আপনি ওদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন। এতে আপনি অপরাধী হবেন না। (৫৪)

وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَىٰ تَنْفَعُ الْمُؤْمِنِينَ ٥٥

এবং বোঝাতে থাকুন; কেননা, বোঝানো মুমিনদের উপকারে আসবে। (৫৫)

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ ٥٦

আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। (৫৬)

مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ ٥٧

আমি তাদের কাছে জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে আহার্য যোগাবে। (৫৭)

إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ ٥٨

আল্লাহ তা’আলাই তো জীবিকাদাতা শক্তির আধার, পরাক্রান্ত। (৫৮)

فَإِنَّ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا ذَنُوبًا مِثْلَ ذَنُوبِ أَصْحَابِهِمْ فَلَا يَسْتَعْجِلُونِ ٥٩

অতএব, এই যালেমদের প্রাপ্য তাই, যা ওদের অতীত সহচরদের প্রাপ্য ছিল। কাজেই ওরা যেন আমার কাছে তা তাড়াতাড়ি না চায়। (৫৯)

فَوَيْلٌ لِلَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ يَوْمِهِمُ الَّذِي يُوعَدُونَ ٦٠

অতএব, কাফেরদের জন্যে দুর্ভোগ সেই দিনের, যেদিনের প্রতিশ্রুতি ওদেরকে দেয়া হয়েছে। (৬০)